December 22, 2024, 9:51 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
রোববার মহালয়ার মধ্যে দিয়ে হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এ ধরনের ধর্মীয় উৎসব বরাবরই স্পর্শ করে আসছে ধর্ম-বর্ণ ভেদে বাঙালীর প্রায় প্রতিটি হৃদয়। উৎসবের আমেজ ঘিরে থাকে সর্বত্র।
এদিকে দুর্গাপূজা ঘিরে মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে নির্দেশনা ছিল, তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও অসংখ্য পূজা মন্ডপে পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি সিসি ক্যামেরা, গঠন করা হয়নি স্বেচ্ছাসেবক দল এবং অনিরাপদ স্থানে স্থাপন করা হচ্ছে অস্থায়ী পূজামন্ডপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ না করে মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত করলে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার দায়ভার সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটিকেই নিতে হবে, যে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেস ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।’
সারাদেশে অসংখ্য পুজা মন্ডপে এসময়টিতে নানা অঘটন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মন্ডপের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা, পুজা অর্চনায় বাধা প্রদান প্রভৃতি। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কিছু স্থানে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এসব ঘটনার সবই সাম্প্রদায়িক তা নয়। এ প্রেক্ষিতে প্রতিবেদনের শেষের অংশে বলা হয়, পূজা শুরু হওয়ার আগেই কমিটি বিষয়ক দ্বন্দ্ব সমাধান করে দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন করা প্রয়োজন। নানা সময় ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিজেদের মধ্যকার কিংবা স্থানীয় মুসলমানদের সাথে দ্বন্দ্বের বিষয়গুলোকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রচার করা হয়। যেকোন সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বার্তা প্রদান করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক অবশ্য দাবি করেছেন যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে স্থায়ী মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ও কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী মণ্ডপে এখনও নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে তিনি স্বীতার করেন।
তবে প্রতিবেদনে গ্রামীণ জনপদে স্থাপিত অস্থায়ী পুজা মন্ডপগুলোর বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়। গ্রামীণ জনপদে মন্ডপের জমি নিয়ে প্রচুর বিরোধ রয়েছে। বিরোধ রয়েছে মন্ডপের মালিকানা নিয়ে বংশ পরম্পরার দ্ব›দ্ব। এসবকে ঘিরেও অসংখ্য প্রতিমা ভাংচুরের ঘটান ঘটে থাকে।
সারা দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। পূজার নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটিকেও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
গত বছর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নে মন্দিরের জমি নিয়ে বিরোধ ও মন্দিরের মালিকানা নিয়ে গোলমালের জের ধরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এবারও কুষ্টিয়া শহরের একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আবার এসব অবস্থার সুযোগ নিয়ে থাকে দুস্কৃতিরা। তারা মন্ডপ ভেঙে থাকে। প্রতিমার ক্ষতিসাধন করে। দেশে অস্থিরতা ৃসষ্টির পায়তারা করে। তবে এসব ঘটনার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ এখনও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজার নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৯টি নির্দেশনা প্রদান করেন। যার মধ্যে ছিল- পূজামণ্ডপে অন্য বাহিনীর ছাড়াও ২৪ ঘণ্টা আনসার বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা নজরদারি করবে, সব মণ্ডপে বাধ্যতামূলক সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে, এমন জায়গায় পূজামণ্ডপ করা যাবে না যেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না, পূজামণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবকদের বাধ্যতামূলকভাবে হাতে আর্মব্যান্ড পরতে হবে, যেকোনো গুজবের ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখা হবে, বিশেষ করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করা হবে, কোনো ধরনের গুজব ছড়ানোকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।
এছাড়াও পূজার সময় পুলিশ সদর দপ্তর এবং জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা যাবে, থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজানের সময় পূজামণ্ডপে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ সহনীয় রাখতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply